শুরুতেই যে প্রশ্নটি করতে হয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ড কাদের অধীনে রয়েছে? কেন এমন জিজ্ঞাসা, তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো আমরা এই লেখনীতে।
গত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনে (যাদেরকে বলা হয় স্বৈরশাসক এবং ইসলামের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না কারী) তাদের আমলেও তারা জনগণের ভয়ে, ক্ষমতার টিকিয়ে রাখতে বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করে নি। এর মানে এই নয় যে তারা ভালো ছিল। একদিক বিবেচনা করে তাদের প্রশংসায় নিমজ্জিত নই।
বিষয়টি হলো, কেন এমন কথা –
“গত বুধবার( ০৯-০৪-২৫) এক অফিস আদেশের মাধ্যমে বলা হয়েছে, দেশের সকল মাদরাসায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে এবং সাড়ম্বরে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপনের জন্য মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সব মাদরাসায় এই উৎসবের আয়োজন করতে হবে।”
তাহলে এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে যে বর্তমানে কারা এই মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক এবং অন্যান্য দায়িত্বে রয়েছে যারা এমন অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এমন দূরদর্শীহীন সিদ্ধান্ত প্রদানের ফলে সারাদেশে মাদরাসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাশাপাশি জন সাধারণের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তার ও ঘৃণার একটা ছাপ দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং এমন ইসলামের মৌলিকত্বের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়ের প্রতিপালনে তীব্র নিন্দা ও অসমর্থন জানিয়েছেন।
অনৈসলামী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নববর্ষ উদযাপন করে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় এবং বরণ করে। বিশেষত, বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতে মঙ্গল-শোভাযাত্রার নামে বিভিন্ন শিরকী কার্যকলাপের মাধ্যমে নববর্ষবরণ করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণভাবে ইসলাম-বিরোধী ও হিন্দুয়ানী কালচার। কোন মুসলিম নিজেকে ইসলামের-অনুসারী দাবি করার পর এসব কাজের সাথে যুক্ত হওয়া কিংবা সমর্থন যোগাতে পারে না।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে: وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإسْلامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْه
وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসরণ করতে চাইবে, কস্মিনকালেও তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আলে ইমরান: ৮৫)
- সহীহ হাদিসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করলো, যা আমাদের ধর্ম-ইসলামে সমর্থিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (সহীহ মুসলিম)
- হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি (বিধর্মী) কোন সম্প্রদায়ের অনুসরণ-অনুকরন করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে।”
(সুনানে আবু দাঊদ)
সরকার ও মাদরাসা অধিদপ্তর চৈত্র সংক্রান্তি বিজু বৈসু সাংগ্রাই প্রভৃতি উৎসব পালনের নামে মাদরাসার মুসলিম ছাত্রদের দিয়ে শিব ও কালী পূজা, গঙ্গা পূজা, বুদ্ধ পূজা করাতে চাইছে? মাদরাসা মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুসলিম ধর্ম মতে মূর্তিপূজা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।
মহান আল্লাহ বলেন-
- হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ ও জুয়া আর প্রতিমা-মূর্তি এবং ভাগ্য নির্ধারক তীর সমূহ অপবিত্র শয়তানের কাজ, তাই তোমরা তা পরিহার কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।
[সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০]
- তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাকো এবং মিথ্যা কথা পরিহার করো।
[সূরা হাজ্জ, আয়াত ৩০]
পরিশেষে বলি, আমরা যারা ঈমানদার তাঁদের কর্তব্য হলো, নতুন-পুরাতন সকল মুশরিকদের লক্ষ্যে, মুসলিম-জাতির-পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস- সালাম এর আদর্শ অনুসরণ করে, তাঁর সাথে কন্ঠ মিলিয়ে ঘোষণা দেয়া:
إِنَّا بُرَءَ ٰۤ ؤُا۟ مِنكُمۡ وَمِمَّا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ كَفَرۡنَا بِكُمۡ وَبَدَا بَیۡنَنَا وَبَیۡنَكُمُ ٱلۡعَدَ ٰوَةُ وَٱلۡبَغۡضَاۤءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤۡمِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَحۡدَهُۥۤ
“তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করছো–তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের (আকীদা- বিশ্বাস) অস্বীকার করি। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরকালের শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে গেছে। যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।” (সূরা মুমতাহিনা: ৪)
পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি ও আরো অন্যান্য শিরকী উৎসব থেকে মুসলিমদের দূরে থাকা আবশ্যক। এবং কি এই আদেশের কারণে বর্তমান মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
0 Comments