সম্প্রতি ইসকনের ধর্মীয় গুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। জাতীয় পতাকা অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের পর ক্রমেই উত্তাল হচ্ছে পরিস্থিতি। ফলে প্রশ্ন উঠছে কী ধরনের সংগঠন এই ইসকন? বাংলাদেশে ইসকনের অবস্থা – তাদের কি কোনো নিবন্ধন আছে কিনা? কিভাবে তারা পরিচালিত হচ্ছে? কি কি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বা করেছে? তাদের আয়ের উৎস কি? বর্তমান বাংলাদেশে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম গুলো কি কি? আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে কেন ইসকন নিষিদ্ধ হবে না? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা এই নিবন্ধে জানবো-
সাধারণত ইসকন একটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংগঠন হিসাবে পরিচিত। যা আজ থেকে মাত্র ৫৪ বছর পূর্বে ১৯৬৬ সালে আমেরিকার নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রভুপাদ। তিনি ১৯৬৬ সালে ইসকন নামে একটি আলাদা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে চান। এতে সমসাময়িক সনাতনী ধর্মীও নেতারাও অনেকে বিরোধিতা করেন। তবে আমেরিকায় বেশ কিছু খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মীও নেতাদের সহায়তায় এবং সমর্থনে ইসকন নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি প্রায় বিশ্বের অর্ধ-শতের বেশি দেশে পরিচালিত হলেও বর্তমানে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বিশ্বের ১০ টির বেশি দেশে এই সংগঠন নিষিদ্ধ রয়েছে।
এটি আসলে একটি রাজনৈতক, সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও উগ্রবাদী তৈরির কারখানা, ভারতীয় আরএসএস তত্বাবধানে পরিচালিত একটি সংগঠন যাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ধর্মীয় সম্প্রতি নষ্ট করে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে একটা দাঙ্গা তৈরি করা। যা সম্পূর্ণ ভারত সরকারের রাজনৈতিক হাতিয়ার। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে – এটি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম সহযোগী, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ইসকনকে ‘প্রকৃত অর্থেই ধর্মবিরোধী ও পেশীশক্তি’ বলেছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘ।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের প্রকৃত জন্ম নিবন্ধন তথ্য উদঘাঠণ করা এখন জরুরী বলে আমরা মনে করি, তাহলে আরও অনেক থলের বিড়াল বের হয়ে যাবে, সে কি ভারতীয় নাগরিক বা বাংলাদেশের নাগরিক?
প্রশ্ন হোল, একটা ব্যক্তিকে আটক করলে পুরো সরকার হামলে পড়ে, এর গুঁড় তথ্য কি? ডঃ জাকির নায়েকের ব্যাপারে ভারত যা করেছিল, কই তার ফলে তো বাংলাদেশ তাদের উপর কোনরূপ বিরূপ আচরণ দেখায় নাই, এখন তা হলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বেলায় ভারতের আচরণ এমন কেন? বিদগ্ধের ভেবে দেখা উচিত।
বাংলাদেশে ইসকনের অবস্থা – সম্প্রতি উঠে এসেছেতারা বাংলাদেশে কোন ধরনের নিবন্ধনে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে? এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কিভবে তারা পরিচালিত হচ্ছে? বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে কিভাবে এটি পরিচালিত হয়েছে বা কি নামে বা ধরনের সংগঠন হিসেবে তা এখনো অজানা। যেহেতু এই সংগঠন বিগত আওয়ামী সরকারের দোসর ছিল সেহেতু এই সংগঠনটি চলতে তাদের বিশেষ কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় নি। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের সাথে যোগসাজশে তাদের স্বার্থ হাসিল করেছে, আর এইদিকে সন্ত্রাসী সংগঠনটি তাদের কাজ অবাধে করে গিয়েছে কোনো রকম নিবন্ধন ছাড়াই।
গত ১৬ বছরে এ সংগঠনটি যে যে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে বা করার চেষ্টা করেছে এবং যেগুলো তাদের পরিকল্পনায় আছে বা ছিল এগুলো দেখে আসা যাক-
- ভারতের আধিপত্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ইসকন পাশাপাশি মার্কিন আধিপত্যও
- অখণ্ড ভারতবর্ষ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভারতের অধীনস্থ করা।
- ‘Hinduism’ প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা।
- মুসলমানদের অস্তিত্বকে ভূলুণ্ঠিত করে এই দেশে তাদের রাজত্ব কায়েম করা।
- সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা। বাংলাদেশকে মাথা উচু করে দাড়াতে না দেওয়া।
- বাংলাদেশের সরকারকে চাপে রাখতে ভারতের ‘সফট পাওয়ার’হিসেবে কাজ করে বা করছে ইসকন।
- বিগত আওয়ামী সরকারকে টিকিয়ে রাখা।
বর্তমানে
- ইসকনের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখা
- পতিত স্বৈরাচারকে ফেরানোর ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে ষড়যন্ত্র করছে ইসকন।
- ভারতের “র” এর ভাড়াটের ভূমিকায় এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করা।
ইসকন এনজিও প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের হিসাবের দীর্ঘদিন কোনো অডিট হয় না। তাদের আয়-ব্যয়ের উৎস কেউ জানে না। অতি দ্রুত স্বাধীন কমিশন গঠন করে এর আয়ের উৎস প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
বাংলাদেশে ইসকনের প্রতারণামূলক, সন্ত্রাসী কার্যক্রম গুলোর দিকে আমরা লক্ষ্য করি-
১) বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা এবং সনাতনদের মেরে পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়া। যেমন স্বামীবাগের মন্দিরটি আগে সনাতনদের ছিলো, পরে ইসকনরা কেড়ে আগেরদের ভাগিয়ে দেয়। এছাড়া সিলেটের জগন্নাথপুরে সনাতনদের রথযাত্রায় হামলা চালিয়েছে ইসকন নেতা মিণ্টু ধর।
(খবরেরসূত্র-http://goo.gl/XwkLvm,http://goo.gl/7hegYE)
২) বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে সাম্প্রদায়িক হামলা করা। কিছুদিন আগে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবীর নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিলো ইসকন।
৩) বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরী করে, উগ্রহিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানো। যেমন- জাতীয় হিন্দু মহাজোট, জাগো হিন্দু, বেদান্ত, ইত্যাদি। বর্তমান অনলাইন জগতে যে ধর্ম অবমাননা তার ৯০% করে ইসকন সদস্যরা।
৪) বাংলাদেশে গত ২৬ নভেম্বর ’২৪ এর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ পরবর্তী সহিংসতায় চিন্ময় দাসের অনুসারী ও ইসকন সমর্থকরা সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা করেছে।
বিস্তারিত নিচের লিংকে
এখন এটা বলা যায় যে, ইসকন সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের অন্যতম সংগঠন।
চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অনতিবিলম্বে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
Source:
- আইনজীবী মনির উদ্দিন
- খেলাফত আন্দোলন
- Dhaka Post
- RTV Online
0 Comments