ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো: আজিজুল হক ,গত ১১ ডিসেম্বর ২০২২, সই করা নোটিশে বলা হয় বাংলা বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে , গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলা বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী বাংলা বিভাগের প্রতি ব্যাচের সংযোগ ক্লাস (টিউটোরিয়াল প্রেজেন্টেশন), মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তের জন্য কানসহ মুখমণ্ডল পরীক্ষা চলাকালীন সময় দৃশ্যমান রাখতে হবে। (1)
- যা বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে জীবন ও ব্যাক্তিস্বাধিনতায় এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ ।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবির ভূক্তভোগী তিন নারী শিক্ষার্থীর পক্ষে আইনজীবী ফয়জুল্লাহ ফয়েজ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন । পরবর্তিতে এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ মে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ’পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন চলাকালে প্রত্যেক ছাত্রীর কান ও মুখমণ্ডল খোলা রাখতে হবে বলে আদেশ দিয়েছেন ।
- আপিল বিভাগ বলেন, ”শিক্ষকরা পিতার সমতুল্য”। সেজন্য পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য তারা ছাত্রীদের মুখ মণ্ডল দেখতে পারেন। (2)
আপিল বিভাগের এমন মন্তব্য না কোনো সংবিধান অনুযায়ী , বা কোনো ধর্মীয়গ্রন্থ অথবা অভিধান অনুযায়ী যুক্তিসঙ্গত । যা বিচার বিভাগের জন্য একটি প্রহসন মাত্র ।
- সেটা হোক দেশীয় বা আন্তর্জাতিক, লিখিত বা অলিখিত এমন কোনো সংবিধান নেই যেখানে এরুপ মন্তব্য পাওয়া যায় ।
- দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন অভিধান অনুযায়ী…
‘Father’ means –(N) a male parent, the Priest, or the founder of a family.
(verb)- to become the father of a child by making a woman pregnant.
(Longman Dictionary p-625)
‘Teacher’ means- a person whose occupation is to teach or educator.
(p–1807)
উপরোক্ত সংজ্ঞা যা উভয় কে পৃথক করে ।
- পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ’কোরআন’ ও বিশুদ্ধ হাদিসের সাথে ’শিক্ষক পিতার সমতুল্য’ উক্তিটি সম্পূর্ণরুপে সাংঘর্ষিক।
- একজন অজ পাড়াগাঁয়ের অশিক্ষিত লোকের মুখেও এই রকম উক্তি কেউ কোন দিন শুনেছে বলে আমার জানা নাই, কবি কাজী কাদের নেওয়াজ তার শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতায় শিক্ষককে শিক্ষাগুরু বলে উল্লেখ করেছেন। আজ অবদি এ নিয়ে কারও কোন আপত্তি ওঠে নাই, তিনি সঠিক বলেছিলেন বলে।
- সাধারণত আপীল বিভাগের কেউই যখন কিছু বলেন, তা অন্য কোন আইনের আলোচনার উদ্ধৃতিকে প্রসঙ্গ হিসাবে উল্লেখ করেন, আজ অবদি পর্যন্ত কেউ কোন বিচারপতি বা আইনজ্ঞের কাছে এই রকম কোন উদ্ধৃতি শুনেছেন বলে আমরা জানি না। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি নিজ থেকে যদি এইরুপ আইন বা ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক বক্তব্য পেশ করেন তবে তা সমগ্র জাতির মুখে কালিমা লেপন ছাড়া আর কিছুই না।
যেখানে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআ‘লা নারীর মাহরাম নির্ধারিত করে দিয়েছেন
’’ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ–সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’’ (সূরা আন নূর -৩১)
যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। অর্থাৎ মাহরাম বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্বে যত পুরুষ আছে সব গায়রে মাহরাম ।
অতএব একজন শিক্ষক গায়রে মাহরাম তার সম্মুখে মুসলিম রমনীর পর্দাবিহীন থাকা বা চলা উভয়ই মহান রবের অবাধ্যতা বা হারাম ।
- এছাড়াও একজন সন্তান তার পিতার কাছ থেকে যে সম্পত্তির অধিকার ভোগ করে তা একজন শিক্ষকের পক্ষ থেকে কি সম্ভব? তাহলে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে সমতুল্য?
- তাছাড়া শিক্ষক যদি বাবার মতোই হবেন তাহলে ,তবে পত্রিকার পাতায় পাতায় শিক্ষক কর্তৃক যৌননিগ্রহের নিউজ এতবেশি কেন পড়তে হচ্ছে আমাদের!
সম্প্রতি গত ২৩ আগস্ট দৈনিক প্রথমআলো , যুগান্তর, কালেরকন্ঠ পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত গাজিপুরে কোচিং সেন্টারের ঘটনা অন্যতম ।
- আধুনিকতার যুগে শনাক্তকরণের অযুহাতে ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এবং কি মুসলমানদের অনুদিত জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্দাশীল মুসলিম নারীদের পর্দাহীন করার ষড়যন্ত্র অনতিবিলম্বে বন্ধ করা হোক ।
আইন মানুষের কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়। দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠে নিকাববিরোধী আইন প্রণীত হলে তাতে দেশ ও জাতির কী কল্যাণ হবে বোধগম্য নয়। সিংহভাগ মানুষের ধর্মবিশ্বাস, আবেগ-অনুভূতি ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে যদি নিকাববিরোধী আইন তৈরি করা হয়, তবে দেশবাসী সেটা কখনোই মেনে নেবে না। আমরা চাই, আসন্ন রায়ে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক।
আর আমরা যারা দায়িত্বশীল আছি তারা কি পরবর্তী প্রজন্মের নিকট দায়বদ্ধ নয় কী ?
তথ্যসূত্র:
1. ডিবিসি নিউজ ৮ই মে,২০২৩ ,০১:০৮ অনলাইন সংস্করণ এবং ইত্তেফাক অনলাইন ডেস্ক ,২৯ মে ২০২৩ ।
2. মানবজমিন অনলাইন ডেস্ক, ২৯ মে ২০২৩, ১:১০ সোমবার ।
0 Comments