বলা হয়ে থাকে যে একটা জাতির মেরুদন্ড হলো ’শিক্ষা’ অর্থাৎ একটি দেশের জনগণের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যেবোধ , সুশৃঙ্খল ও সংঘবদ্ধ জাতি গঠনে , ভ্রাতৃত্ববোধ বিনির্মাণে , দেশকে সুন্দরভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে ,আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে , আত্নপরিচয় উদঘাটনে , নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি জানতে সর্বোপরি একটা পূর্ণাজ্ঞ মানুষ ও দেশ বিনির্মাণে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিহার্য ।
কিন্তু এ জন্য প্রত্যেক দেশের পাঠ্যবইয়ে প্রয়োজন সে দেশের সঠিক সংস্কৃতি ও মূল্যেবোধ এবং ধর্ম চেতনা। যেখানে সেখানকার অধিকাংশ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে, ভিন্ন কোনো সংস্কৃতি এনে তাদের চিরায়ত অধিকার ক্ষুন্ন করবে না। এছাড়াও বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস সংযুক্ত করার সময়ও অবশ্যই নিজস্ব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যেবোধ বজায় রাখতে হবে । যদি এটা না করা হয়, তবে তারা তাদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি হারাতে বসবে এবং এক বিশৃঙ্খল পরিবেশে অধ:পতন তরান্বিত হবে।
আর সেজন্যই তো বিশ্বের প্রতিটি দেশেই হোক ছোট বা বড় তাদের পাঠ্যবইয়ে তাদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির পরিচর্যা পরিলক্ষিত হয় ।
কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ পাঠ্যবইয়ে বিশেষ করে ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের বইগুলোতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্মকে ধারাবিহিক ভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ (৯০%) মুসলিম যা আগেও ছিল এখনো আছে । সে হিসাবে আমাদের পাঠ্যবই গুলো হবে মুসলিমদের মূল্যেবোধের উপর ভিত্তি করে যা তাদের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক অধিকার ।
আমরা যদি বইগুলোর দিকে লক্ষ্য করি,
- ৬ষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলনের ১১ পৃষ্ঠা,
এখানে এটা স্পষ্ট লক্ষণীয় যে– পৌরাণিক কল্প-কাহিনী ও কুসংস্কারকে উৎসাহিত করা হয়েছে যার কোন বিশ্বস্ত দলিলও নাই মূলত মুসলিম সমাজে মুশরিকদের প্রসার ঘটাতে এই ছবির ব্যবহার ।
- ৬ষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বইয়ের ৭৬ পৃষ্ঠা,
ফিজিক্সের বল ও শক্তির সাথে অপ্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা এখানে ব্যবহারের কোনোই প্রয়োজন ছিল না মুসলিম মেয়েদের মধ্যে পর্দাহীনতা তৈরি তাদের উদ্দেশ্য। ভাবতে অবাক লাগে এই লেখকদের মধ্যে কেউই মুসলিম নয় কী? তাদের ধর্মীয় জ্ঞানের এতই অধঃপতন কিভাবে হলো?
উপরোক্ত বিষয়গুলো মুসলিমদের মূল্যেবোধের সাথে পুরোপুরিভাবে সাংঘর্ষিক ।
এছাড়াও
- ৬ষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ১৩৬ পৃষ্ঠা,
বিজ্ঞান বইতে অপ্রাসঙ্গিক রূপকথার গল্প লিখেছে জাফর ইকবাল। প্রথম দিন থেকেই সবাই জানে সে কি প্রকৃতির? তাকে দিয়ে কেন এই চর্চা? আজকে পাঠ্য বইতে যে ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগ উঠছে, এই জাতীয় অনেক জিনিসের Lite version বহুকাল আগে থেকেই Muhammed Zafar Iqbal এর বইতে পাওয়া যেতো।
উদাহরণঃ
https://drive.google.com/file/d/1oi7m2iuDRv80S_708RvhMvgHoJB5yoUH/view?usp=share_link
- তবে সবচেয়ে দু:খজনক ব্যাপার হলো যে ৬ষ্ঠ বা ৭ম শ্রেণির সকল পাঠ্যবইয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে ফ্রি-মিক্সিং কে তীব্রভাবে সমর্থন করা হয়েছে। অথচ আজকের যুগের যত নষ্টামি, নোংরামি, জেনা, হত্যা সবই এই ফ্রি- মিক্সিং এর মুল।
- এছাড়াও প্রত্যেকটা ছবিতে নারীদেরকে মুসলিম সংস্কৃতি বহির্ভূত প্রতিচ্ছবি ব্যবহার অর্থাৎ তথাকথিত নারীবাদিদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে । আপনারা যদি বইগুলো লক্ষ্য করে দেখেন , তাহলে একটা বিষয় স্পষ্ট হবে যে , ছোট বা বড় আকারের হোক হিজাব বা বোরকা পরিহিত একটা ছবি পাওয়া দুষ্কর ।
কিন্তু কথা হলো যারা হিজাব বা বোরকা পরে তারা কি শিক্ষা গ্রহণ করে না? তারা কি দেশ সেরা হয় না (মেডিক্যাল বা চাকরির ক্ষেত্রে), তারা কি দেশের উন্নয়নে কাজ করে না?
কেন তাহলে তাদেরকে অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়? এর মাধ্যমে কী তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না?
আপনারা আসুন -বসুন , একে অপরের সাথে এ বিষয়ে কথা বলুন ,সোচ্চার হোন । জনগণের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন।
আমরা অবশেষে বলতে চাই , শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিকট সদয় আবেদন এই যে, আপনারা অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে আগ্রহী হোন। আল্লাহ্ তা’লাকে ভয় করুন।
0 Comments