একজন মুমিন-মুসলমান হিসাবে কোনো কিছু করার আগে তা কুরআন-হাদীসের আয়নায় যাচাই করাই আমাদের প্রথম কর্তব্য। এরপর অন্যান্য দিক বিবেচ্য হবে। ক্ষুদ্রঋণেও তাদের হাতিয়ার হচ্ছে সুদ। যা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে।
- আর সুদের ভয়াবহতার কথা কুরআন মাজীদে এভাবে বর্ণিত হয়েছে- ‘যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতের ময়দানে দন্ডয়মান হবে সে ব্যক্তির মতো যাকে শয়তান আসর করে মতিচ্ছন্ন করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদী লেন-দেনের মতোই। অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয়কে করেছেন বৈধ আর সুদ করেছেন হারাম। [বাকারা: ২৭৫]
- অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি সুদ পরিহার না কর, তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও।’ [বাকারা: ২৭৯]
সাহাবী সামুরা ইবেন জুনদাব রা. এর বর্ণনায় সুদের ভয়াবহতা বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, দু’জন লোক আমার নিকট আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চলছে। যেতে যেতে আমরা এক রক্তের নদীর পাড়ে দাঁড়ালাম। এ সময় দেখতে পেলাম একজন লোক নদীর মাঝে দাঁড়ানো। আরেকজন লোক নদীর পাড়ে দাঁড়ানো। পাড়ে দাঁড়ানো লোকটির সামনে অনেকগুলো পাথর। নদীর মাঝের লোকটি পাড়ের দিকে আসতে ইচ্ছা করলে পাড়ের লোকটি তার মুখে স্বজোরে এমনভাবে পাথর নিক্ষেপ করে যে, লোকটি পুনরায় আগের জায়গায় পৌছে যায়। সে যতবারই পাড়ে আসতে চায়, ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। ফলে সে আগের যায়গায় চলে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ লোকটি কে যার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে? উত্তরে বলা হলো, এ হচ্ছে সুদখোর ব্যক্তি। [বুখারী, হাদীস: ২০৮৫]
- অন্য বর্ণনায় সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ করেছেন সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদের সাক্ষি ও সুদের লেখকের উপর। [আবু দুাউদ, হাদীস: ৩৩৩৩; ইবনে মাজা, হাদীস:২২২৭]
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা রা. এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, জেনে শুনে সুদের একটি দেরহাম গ্রহণ করা ৩৬ বার ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া থেকেও ভয়ানক গুনাহ। [আহমাদ, হাদীস: ২১৯৫৭]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর আলোকে এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, সুদ অর্থ আয়ের একটি জঘন্য ও অভিশপ্ত পথ। সুদখোরের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা! এর সাথে যে কোনোভাবে জড়িত সকলকেই অভিশাপ করেছেন রহমতের মূর্ত প্রতীক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাই একজন মুমিন সুদের মতো জঘন্য কোনো কারবারে জড়াতে পারে না।
0 Comments