ট্রান্সজেন্ডারবাদ এক অপসংস্কৃতির অধ্যায় (পর্ব-02)


ট্রান্সজেন্ডারবাদ সামাজিকীকরন সৃষ্টি করবে মারাত্মক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি

ট্রান্সজেন্ডারবাদ রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। নষ্ট হবে ব্যাক্তিগত প্রাইভেসি। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে বিশৃঙ্খলা। নারীর অবয়বে পুরুষ ঢুকে পড়বে অন্দর মহলে। গাড়ীতে, পার্কে সবত্র নারীরা নির্যাতিত হবে। ইজ্জত-সম্মান হারাবে নারীরূপী এসব ট্রান্সদের কাছে। কলেজ-ইউনিভার্সিটি ও হসপিটালের মতো জায়গাগুলোতে নারীর একান্ত নামাজের জায়গা ও ওয়াশরুম হবে তামাশার পাত্র। যে কেউ নারীর বেশে এসব স্থানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। এর নজির বিশ্বব্যাপি অহরহ। বিপত্তি তৈরি হবে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে। একজন নারী জেন্ডার আইডেন্টিটি পরিবর্তন করে পুরুষের সমান অংশ দাবি করবে। বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে নারীদের চাকরির ক্ষেত্রেও। একজন পুরুষ জেন্ডার আইডেন্টিটি পরিবর্তন করে নারী কোটায় সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে অনায়াসে। জেলখানা, হোস্টেল এবং টয়লেটগুলোতে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি ছড়িয়ে পড়বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ব্রিটেন মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী- জেলখানার ১৭৬ জন ট্রান্সজেন্ডার নারীর (জন্মগত পুরুষ) ৭৬ জন যৌন নির্যাতনমূলক অপরাধে জড়িত। (সূত্র – কালবেলা: ১৯ ডিসেম্বর,২০২৩)

বিবিসি নিউজে দেখা যায়, একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী (জন্মগত পুরুষ) একটি শিশুকে ধর্ষণের অপরাধে

জেলখানায় যায়। পরে ছাড়া পেয়ে সে আবার একজন নারীকে ধর্ষণ করে। (বিবিসি নিউজ, ইংল্যান্ড, ১০ মে-২০২৩)

পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্ষক ট্রান্সজেন্ডার না অবশ্যই। তবে ট্রান্সদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ চোখে পড়ার মতো। সংবাদমাধ্যমগুলোতে এমন ধর্ষনের ঘটনা কম নয়। সেটা বিপরীত লিঙ্গের সাথে নয় বরং ট্রান্সজেন্ডার নারী কর্তৃক অপর নারীকে ধর্ষণের ঘটনাই বেশি। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শুধু মুখে মুখে দাবি করলেই জেন্ডার আইডেন্টিটি পরিবর্তন হয় না। কপালে টিপ আর শাড়ি, গহনা, আলতা পরলেই নারী হওয়া যায় না। এমনকি অস্ত্রোপচার করে জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করলেও নয়। একই কথা নারী থেকে পুরুষ ট্রান্সজেন্ডারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদকে “না” বলা সময়ের অপরিহার্য দাবি।

ট্রান্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত

ট্রান্সজেন্ডারবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষকদের অনেক অভিমত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ইলন মাস্কের মতো ব্যাক্তিরাও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন। এই জঘন্য মতবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইলন মাস্ক সম্প্রতি what is a women নামে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি শেয়ার করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ১৭০ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখেছে। (কালবেলা- ডিসেম্বর-৭, ২০২৩)

মিডিয়ায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায় যে, ইলন মাস্কের ছেলে জাভিয়ার লিঙ্গ পরিবর্তন করে জেনা নাম ধারণ করে মেয়ে হয়। ইলন মাস্ক এতে চরম ক্ষুব্ধ হন। এর জন্য ছেলের স্কুলকেও দায়ী করেন তিনি। (ইনকিলাব – সেপ্টেম্বর-৪, ২০২৩)

সম্প্রতি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে মন্তব্য করে বলেন – ‘কেউ চাইলেই লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে না, পুরুষ পুরুষই, নারী নারীই’। স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ অন্তর্ভূক্তির প্রতিবাদে গত ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার লক্ষ লক্ষ (মিলিয়ন মার্চ) পিতামাতা রাস্তায় নেমে আসেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নির্বাচনে জয়লাভ করার পর বলেন, এই বিজয় এলজিবিটি মতাদর্শের বিরুদ্ধে বিজয়। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রান্সজেন্ডার একটি বড় ইস্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ সমস্ত প্রতিবেদন থেকে বুঝা যায়, ট্রান্সজেন্ডারবাদ বিশ্বব্যাপী কতটা গুরত্বপূর্ন ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। সর্ব মহলে কতটা গুরত্বের সাথে স্থান পাচ্ছে। এই মতবাদ সময়মত প্রতিহত করা না গেলে পুরো পৃথিবী নরকে পরিণত হবে। মানুষের স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়া প্রবলভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি হবে ঈমান বিধ্বংসী

বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদ ও তাদের অধিকার নিয়ে একটি মহল দৌড়ঝাঁপ করছে। শুধু এতটুকুতেই শেষ নয়। পাঠ্যপুস্তকেও ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ ঢুকে পড়েছে। শরীফার গল্প নামে সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও ভূগোলের অনুশীলন বইয়ের ৫১-৫৬ পৃষ্ঠায় সরাসরি ট্রান্সজেন্ডারবাদের দীক্ষা দেয়া হয়েছে। হো চি মিন ইসলাম নামে এক ট্রান্সজেন্ডার নারী তো ট্রান্সদের অধিকার বিষয়ে কথা বলতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছে। ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ বাংলাদেশে ডাল পালা ছড়িয়ে বহু দূর চলে গিয়েছে। দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দেশব্যাপী ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করছে ৩০টি কমিউনিটি অরগানাইজেশন। অত্যন্ত আশংকার ব্যাপার হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করছে ৩০টি কমিউনিটি বেজড্ অরগানাইজেশন। অত্যন্ত আশংকার ব্যাপার হচ্ছে, ট্রান্সজেন্ডার আইন পাস হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

২০২২ সালে ট্রান্সজেন্ডার আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। ২০২৩ এর ২১ সেপ্টেম্বর সে খসড়া আইন উপস্থাপন করা হয়। আইনটি পাস হতে আর মাত্র দুটি ধাপ বাকি। বিকৃত রুচির অধিকারী কিছু মানুষ পশ্চিমা কালচার এদেশে আমদানি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সম্মিলিত প্রতিবাদ ও জনসচেতনতা তৈরি না করলে এদেশে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের মতো জঘন্য ও অশ্লীল কালচার ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। এতে সমকামিতার মতো মস্তবড় গুনাহের প্রসার ঘটবে। ট্রান্সরা সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম না হওয়ায় পরিবার ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। স্বামী-স্ত্রীর মহান পবিত্র সম্পর্ক বিলুপ্ত হবে। ব্যক্তিগত, সামাজিক, আন্তর্জাতিক সহ সব ক্ষেত্রে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ।

ট্রান্সজেন্ডারের ফিতনা থেকে বাঁচতে আমাদের করণীয়

ট্রান্স মতবাদের মতো অশ্লীল কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে স্বীকৃতি পেলে শুধু পরকালই নয় বরং আমাদের দুনিয়ার জীবনও হাজারো ক্ষতির শিকার হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا

بهَا، إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا

অর্থ: যখন কোনো জাতির মাঝে প্রকাশ্য অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে তখন সে জাতির মধ্যে প্লেগ ও এমন মহামারি ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না (ইবনে মাজাহ – ৪০১৯)।

  • প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত এই বিষয়ে বিপুল পরিমাণ পড়াশোনা করা।
    • নিজে জানা। সাথে সাথে অন্যকেও জানানো।
    • লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি বিতরণের মাধ্যমে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
    • সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সভা-সেমিনারের আয়োজন করতে করতে হবে। সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ প্রদান করতে হবে।
    • শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে।
    • বিষয়টির ভয়াবহতা সম্পর্কে পারিবারিক তা’লিমে ব্যাবস্থা করতে হবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন ভয়াবহ মানসিক ও চারিত্রিক বিপর্যয় থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

সুত্রঃ Muslim Day (একটি অনলাইন পত্রিকা)

লেখাটি প্রস্তুত করেছেন: মাওলানা মাহাদী হোসাইন, শিক্ষক – মাযহারুল উলুম মাদরাসা মিরপুর ১, ঢাকা। (দাওরায়ে হাদীস ও ইফতা: জামিউল উলুম মাদরাসা, মিরপুর ১৪, ঢাকা)

সম্পাদনা করেছেন: মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদক মাওলানা শিব্বীর আহমদ। উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর।


Like it? Share with your friends!

0 Comments