প্রাথমিকে “শিক্ষার্থী তথ্য ছক” ফরমে বিদ্বেষমূলক বিষয়ের অন্তর্ভূক্তি – আপনার মূল্যবান মত দিন।


সম্প্রতি প্রাথমিকের শিক্ষার্থী তথ্য ছক ফরমে কিছু ‘অপ্রত্যাশিত, ষড়যন্ত্রমূলক, ও সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত’ বিষয়য়ের অবতারণা করা হয়েছে। আপনারা যদি বর্তমান শিক্ষার্থী তথ্য ছক ফরমে লক্ষ্য করুন তাহলে একটি বিষয় দৃশ্যমান হবে-

একটা শিক্ষার্থী তথ্য ছকে যে বিষয় গুলো সাধারণত লিখা থাকে বা আমরা জেনে আসছি বা বিধিসম্মত সেগুলো হলো শিক্ষার্থীর নাম, তার ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম বা এদের পরিচয়, এছাড়া যে বিষয় টা অত্যাবশ্যকীয় তা হলো শিক্ষার্থীর ধর্ম কোনটি?

আর ধর্ম কোনটি তা সিলেক্ট করার জন্য যে অপশন গুলো থাকে সেগুলো মূলত সেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে । যা Universal বা সারাবিশ্বে সমাদৃত, গৃহীত।

আমরা একটু বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও ধর্ম নিয়ে স্টাডি করে দেখি- 

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলাদেশের প্রধান ধর্ম হলো ইসলাম (৯০.০৪%), কিন্তু ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিন্দুধর্ম (৮%) অনুসরণ করে; অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ ০.৬%, (বেশিরভাগই থেরবাদ), খ্রিস্টান (০.৩%, বেশিরভাগ রোমান ক্যাথলিক), এবং অন্যান্য (০.২%)। 

২০২২ সালের জানুয়ারির সরকারি অনুমান অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৫,১৫৮,৬২০

বাংলাদেশে ধর্ম (২০২২ আদমশুমারি) 

২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে বাংলাদেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্য 
ধর্মজনসংখ্যা
মুসলিম ১৫০,৩৬০,৪০৫
হিন্দু ১,৩১,৩০,১১০
বৌদ্ধ ১,১০৭,৪৬৬
খ্রিস্টান ৪৯৫,৪৭৫
অন্যান্য১৯৮,১৯০
মোট১৬৫,১৫৮,৬২০
উৎসঃ বাংলাদেশে ধর্মবিশ্বাস, উইকিপিডিয়া

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশে ইসলাম

উপজেলা অনুযায়ী বাংলাদেশে মুসলমানদের শতকরা হার।

২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে বাংলাদেশে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটিরও বেশি। যা দেশের জনসংখ্যার ৯১.০৪%। বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে । বাংলাদেশ চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। মুসলমানরা এদেশের প্রধান সম্প্রদায় এবং তারা বাংলাদেশের ৮ টি বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ্য অবস্থানে আছে। 

কিন্তু বর্তমান প্রাথমিকের ‘শিক্ষার্থী তথ্য ছক’ ফরমে ধর্মের অপশনে নতুন যে দুটি বিষয় ( প্রকাশে অনাগ্রহী-৮ ও ধর্মে বিশ্বাসী নয়-৯) যুক্ত করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি । 

  • যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার(১৬৫,১৫৮,৬২০) মাত্র ০.১২% (১৯৮,১৯০ জন), সেখানে কিভাবে এটা সংযুক্ত করা হয় ? 
  • বা কাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য সংযোজন করা হয়েছে ?
  • একটা ৫ম শ্রেণীর ছাত্রের যেই বয়স সে কোন ভাবেই সঠিক ভাবে ফর্ম পূরণ করতে পারবে না, তার অভিভাবকের সাহায্য নিতে হবে, ফলে ধর্মের কলামটা বাবা-মা ই পূর্ণ করবে, তাহলে ধর্ম প্রকাশে অনাগ্রহী বা ধর্মে বিশ্বাসী নয় সে কি ভাবে বুঝবে? বরং ফলে বুঝা যায় তার বাবা মাও ঐ একই প্রকৃতির কিছু একটা। এতগুলো ধর্মের নাম উল্ল্যেখ করার পরও আবার অন্যান্য কলাম কি অর্থ বহন করে?
  • হাদিসে আছে বাবা মার ওরসে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে মুসলিম হিসাবে, পরে বাবা-মাই তাকে ধর্মান্তরিত করে, ফলে কি এখানে এটা প্রমাণিত হয় না যে বাবা মার ও কোন ধর্ম নাই?

হাদিসে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাত তথা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খ্রীষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে। যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ?” (বুখারী, হাদীস নং-১৩৮৫)

  • ধর্ম প্রকাশে অনিচ্ছুক বা কেন? তাকে কি হেনস্থা করা হবে, সংবিধানে সবার ধর্ম পালনে স্বাধীনতা দেওয়া আছে, কি উদ্ভট চিন্তা, যিনি এই প্রস্তাবগুলো সন্নিবেশিত করেছেন উনিও কি নিজে এই সমস্যায় ভুগছেন?
  • ধর্মই যদি না থাকে তবে ঐ সন্তানদের বিয়ে পরবর্তীতে কি ভাবে হবে, কোর্ট বা কাজী অফিস তবে কি বন্ধ করে দিতে হবে, নাকি লিভ টুগেদারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, জারজ সন্তান জায়েজ করার এক প্রকৃয়া হাতে নেওয়া হয়েছে, পরিবার তন্ত্র ভেঙ্গে দেওয়ার সুদূর পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ নাকি?
  • মায়ের নাম অবশ্যই থাকবে, কিন্তু কোন পরিকল্পনায় বাবাকে পরে দিয়ে মাকে সামনে আনা হয়েছে? যেখানে বিশ্বব্যাপি বাবার নামে পরিচিত হতে হয় সেখানে কেন মার নাম আগে, আল্লাহ্‌ তা’আলা যে দিন হাশরে বান্দার নাম ধরে ডাকবে সেখানে বাবার নাম সংযুক্ত থাকবে, শুধু মাত্র ইসা (আঃ) এর ব্যাপারে মা মারিয়মের নাম এসেছে, ফলে এই দুষ্ট চিন্তা কিভাবে কর্তৃপক্ষের মাথায় এসেছে? এতে কি এটা প্রমান হয় না যে জারজ সন্তান প্রসব যেহেতু মা করেন বাবার পরিচয় উহ্য থাকে ফলে উক্ত ইচ্ছা বাস্তবায়নে সরকারের সুদূর প্রসারী চিন্তার ফসল এটা। এটা জারজ সন্তানকে জায়েজ করার প্রবিধান ও উৎসাহিত করা হচ্ছে কি?

এগুলো আমাদের ও কোটি প্রাণ মুসলিমদের প্রশ্ন, কারণ এটি আমাদের ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত । কারণ এর মাধ্যমে মানুষের ঈমানকে দুর্বল থেকে আরো দুর্বলতর করার প্রয়াস চলছে । হাদিসে এসেছে, 

«يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ الصَّابِرُ فِيهِمْ عَلَى دِينِهِ كَالْقَابِضِ عَلَى الْجَمْرِ»

‘‘মানুষের নিকট এমন একটি সময় আসবে, যখন জ্বলন্ত আগুনের স্ফুলিঙ্গ হাতের মুষ্ঠির মধ্যে রাখার মতই দীন নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হবে’’। 

-তিরমিজি-২২৬০

সেই সময়টা কি এখনও অনেক দূরে?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের ঈমানের হেফাজত করুন। প্রত্যেক বাতিলকে বাতিল বলার সৎ সাহসে আমাদের হৃদয়কে পূর্ণ করুন।
 

শেষে জোর দিয়ে একটা কথা বলতে হয় –“It is high time we stood against all the actions of conspiracy by a group to do something unlawful or harmful for our country and Islam”.

“If we don’t stand against these, our new generation will fall down in a dark situation where they will not find any peace.”


Like it? Share with your friends!

0 Comments