আমরা যদি বর্তমান সমাজের দিকে একটু নজর দেই, তাহলে আমরা যে বিষয় গুলো লক্ষ্য করবো তা হলো-
√ যৌথ পরিবারের বিলুপ্তিতো বটেই, একক পরিবারের অস্ত্বিত্বও এখন সংকটাপন্ন।
প্রবীণেরা আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-চাচি, প্রতিবেশী—আমাদের গুরুজন, আমাদের শ্রদ্ধাভাজন, আমাদের শিকড়। সভ্যতার বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই শিকড় আজ বিলীন হবার পথে। বাংলার ঐতিহ্য যৌথ পরিবারগুলো ভাঙতে ভাঙতে পরিণত হয়েছে ছোটো পরিবারে। জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের যৌথ পরিবারের সংখ্যা এখন ৬ শতাংশে নেমে আসছে। (দৈনিক ইত্তেফাক)
√ বিবাহ বিচ্ছেদের হার তুঙ্গে।
এছাড়া রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে সংসার ভাঙছে ৫০টির বেশি। ২০২৩ সালে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭ হাজার ৩০৬টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৬ হাজার ৩৯৯টি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে।
√ বর্তমানে নারী নির্যাতনের চেয়ে পুরুষ নির্যাতনের মাত্রা অনেক বেশি।
সমাজের প্রায় ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএমআরএফ)।
√ ধর্ষণ ও পরকীয়ার মাত্রাত্রিরিক্ত আধিক্য।
দেশে পরকীয়ায় জড়ানোর কারণে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ সংসার ভেঙে যাচ্ছে। পরকীয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি সংসার ভেঙেছে ঢাকা বিভাগে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
(স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসভিআরএস) ২০২২ শীর্ষক জরিপ)
√ তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত নারী-পুরুষের উগ্র আচরণ।
√ বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতায় সয়লাব।
√ নারী- পুরুষের অবাধ অবৈধ মেলামেশা এবং পতিতাবৃত্তির উৎপাত।
এমন পরিস্থিতিতে আরো ভয়ংকর রকমের একগুচ্ছ প্রস্তাব এনেছে নারী সংস্কার কমিশন। যেখানে যেসব বিষয়গুলো সমাজের জন্য এখন ব্যাধি হয়ে দাড়িয়েছে, সেসব বিষয়সমূহকে বৈধতা দেওয়ার তীব্র প্রচেষ্টা চলছে। যা সমাজের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে।
কমিশনের সুপারিশগুলোর কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো :
১. অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন: বিভিন্ন ধর্মের নিজস্ব পারিবারিক আইন বাতিল করে একক সেকুলার পারিবারিক আইন প্রবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
২. নারীকে তালাকের সমানাধিকার।
৩. উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন: কন্যা ও পুত্রকে সমান অংশ দেওয়ার প্রস্তাব করে কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিরুদ্ধে মত দেওয়া হয়েছে।
৪. বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব
৫. বৈবাহিক ধর্ষণ ধারণা প্রবর্তন: স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্মতির অভাবকে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে এবং পারিবারিক অস্থিরতা বাড়াবে।
৬. যৌনকর্মীদের শ্রমিক স্বীকৃতি: যৌনকর্মকে একটি পেশা বা শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা সমাজে অনৈতিকতা ও বিকৃত সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে পারে।
৭. সিঙ্গেল মাদারকে স্বীকৃতি: বিবাহবহির্ভূত সন্তান জন্ম ও অবৈধ সম্পর্কের পথ প্রশস্ত করতে এই প্রস্তাবকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
এই কমিশনের কাজ এবং সুপারিশগুলো দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। জনসাধারণের টাকায় পরিচালিত কমিশন কখনোই জনগণের বিশ্বাস ও চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না।
এসব প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল, ইসলামিক স্কলার, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, জনসাধারণ বিশেষকরে নারীরা নিজেরাই এবং এদের সংগঠন “সম্মিলিত নারী প্রয়াস” সরব।
তখন আবার এদিকে নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে আরেকদল তথাকথিত ইতর-ভদ্র, সংস্কৃতিমনা নারী, যারা কিনা নিজেদেরকে বেশ্যা হিসেবে দাবি করে এবং বলে
“আমরা সবাই বেশ্যা, বুঝে নিবো হিস্যা” তারা এর বাস্তবায়নে গত ১৬ মে বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ প্রোগ্রামের আয়োজন করে।
এখানে যার এসেছেন তারা অধিকাংশই নারী স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা, বিকৃত যৌনাচার ও এলজিবিটিকিউ বা রূপান্তরকামীদের স্বাধীনতা ও অধিকারের নিরাপত্তার দাবী করেছে তারা।
কথিত এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করে দেশের বিতর্কিত একাধিক ব্যক্তি। সমকামী প্রচারকারী বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক কমিটির সাথে জড়িত মুনতাসির রহমান, পুরুষ থেকে নারী দাবী করা বিতর্কিত রূপান্তর-কামী হোচিমিন ইসলাম ওরফে রোকন, শাহবাগের জনশত্রু লাকী সহ প্রকাশ্যে সমকামিতার প্রচারকারী আরও অনেকে এই অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়েছিল।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসে অংশগ্রহণকারী বিকৃত চিন্তার নারীরা। ওই সব প্ল্যাকার্ডে বাংলা ও ইংরেজিতে নানা ধরণের অশ্লীল স্লোগান ও দাবী দেখা গিয়েছে। ওই সব প্ল্যাকার্ডে ‘আমরা সবাই বেশ্যা, বুঝে নিবো হিস্যা’ ‘আমরা বেশ্যা তো’, ‘বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ’, ‘আমি আদিবাসী ট্রান্স, নারীবাদী’ সহ বিভিন্ন অশ্লীল ও অরুচিকর স্লোগান ছিল। এছাড়াও ইংরেজিতে ‘Intersex Women Exist, Respect our Right’, ‘Trans Women are Women, No Debate’, ‘I am trans woman, No Debate’ সহ নানা স্লোগান ইংরেজি ভাষায় লেখা হয়েছিল।
এমন পরিবেশ দেখার জন্য গত ৫ আগস্ট আমাদের ভাইয়েরা রক্ত দেয়নি। যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ইসলামকে ভালোবেসে আন্দোলনে এসেছিলেন এবং প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আমরা এমন পরিবেশ থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে চাই এবং আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা আহ্বান জানাই এহেন পরিবেশ থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে দায়িত্বশীল হোন।
এর প্রতিকারে ইসলাম কি বলে তা আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে জানবো ইনশাআল্লাহ।
0 Comments