ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে আল কোরআনের প্রসঙ্গ তুলে আলোচনায় এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন। বিষয়টি নিয়ে নানা নেতিবাচক সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি কোরআনের আয়াতকে বিকৃতভাবে উদ্ধৃত করা ছাড়াও অজ্ঞতাপ্রসূতভাবে (বিজিত শব্দের অর্থ না জানা) মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজিত (বিজিত) বাহিনী বলেছেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার শিক্ষকতা করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে তার বক্তব্য তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে পবিত্র কোরআনের সুরা আনফালের কথা উল্লেখ করেন।
সিনেট অধিবেশনে আ ক ম জামাল উদ্দীন তার বক্তব্যে বলেছেন, “পবিত্র কোরআনের সুরা আনফালে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, যারা বিজিত বাহিনী হবে তারা দেশের সম্পদ, চাকরি, অর্থ ও ভূখণ্ডের শতকরা ৮০ ভাগ অর্থাৎ ৫ ভাগের ৪ ভাগের নিয়ন্ত্রণ পাবে। আর বাকি ১ ভাগ থাকবে দুস্থ এতিমদের জন্য।”
পবিত্র কুরআনের সুরা আনফাল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুরাটির ৪১ নম্বর আয়াতে গনিমতের বিধান ও তার বণ্টননীতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
আয়াতটির অনুবাদ হলো– ‘আর তোমরা জেনে রেখ! যুদ্ধে যা কিছু তোমরা (গনিমত হিসেবে) লাভ কর, তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তাঁর রাসুলের, রাসুলের নিকটাত্মীয়, পিতৃহীন এতিম, দরিদ্র এবং পথচারীদের জন্য। যদি তোমরা আল্লাহ ও সেই জিনিসে বিশ্বাসী হও, যা ফয়সালার দিন (বদর প্রান্তরে) আমি আমার বান্দার প্রতি নাজিল করেছিলাম; যেদিন দুদল (মুসলিম ও কাফের) পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল। আর নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’
বাংলা একাডেমি প্রণীত আধুনিক বাংলা অভিধানে (সম্পাদক জামিল চৌধুরী, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬) গনিমত শব্দের অর্থ হিসেবে দেখানো হয়েছে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত পক্ষের নিকট থেকে পাওয়া দ্রব্যসামগ্রী’। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষা অনুযায়ী অমুসলিমদের কাছ থেকে যুদ্ধ-বিগ্রহে বিজয়ার্জনের মাধ্যমে যে মালামাল অর্জিত হয়, তাকেই বলা হয় ‘গনিমত’। আর যা কিছু আপস, সন্ধি-সম্মতির মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাকে বলা হয় ‘ফাই’।
অধ্যাপক জামাল উদ্দীন তার বক্তব্যে এ আয়াতটি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং অপব্যাখ্যা করেছেন। কেননা নিজ দেশের সম্পদ, চাকরি, অর্থ ও ভূখণ্ড কোনোভাবেই গনিমতের মাল নয়। সুতরাং, সুরা আনফালের আয়াতটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
নাজমুল হোসেন লিখেছেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যখন কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে কথা বলেন, ভাবা যায় দেশের দুর্দশা কবে থেকে শুরু।’এ ছাড়া, তিনি (অধ্যাপক জামাল উদ্দীন) তার বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বিজিত’ বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা সঠিক নয়। কারণ, বিজিত শব্দের অর্থ ‘পরাজিত’।
এ বিষয়ে কবি ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিকুজ্জামান রণি তার ফেসুবক আইডিতে লিখেছেন, “যে ব্যক্তি ‘বিজয়ী’ এবং ‘বিজিত’ শব্দের অর্থ বোঝে না, সে ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয় কীভাবে?
কোরআনের অপব্যাখ্যার ভয়াবহতা
(অর্থাৎ যে ব্যক্তি পূর্ণ জ্ঞানী হওয়া ছাড়া (অশুদ্ধ) ফতোয়া দেয় ঐ (অশুদ্ধ) ফতোয়ার গুনাহ ফতোয়া প্রদানকারীর উপরই বর্তাবে। (সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস নং-৩৬৫৯৩, বাবু তাফসিরিল কুরআন আন রাসূলিল্লাহ অধ্যায়।
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআনের তাফসীর কেবল নিজের জ্ঞান দিয়ে করে, তাহলে সে ঘটনাচক্রে সঠিক বললেও তাকে ভুলকারী সাব্যস্ত করা হবে।
(তিরমিযি শরিফ-হাদীস নং-২৯৫২)
অন্য বর্ণনায় এসেছে যে,
ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ
ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺑﺮﺃﻳﻪ ﻓﻠﻴﺘﺒﻮﺃ ﻣﻘﻌﺪﻩ
ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ
অনুবাদ-যে ব্যক্তি স্বীয় যুক্তি দিয়ে কুরআনের তাফসীর করে সে তার আবাস জাহান্নামকে বানিয়ে নিল।
{সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৯৫১}
তাই মুফাসসিরের জন্য বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে।
যেমনঃ
১- কুরআনের সকল আয়াতের উপর দৃষ্টি থাকতে হবে।
২- হাদীসের ব্যাপারে থাকতে হবে অগাধ পান্ডিত্ব।
৩. আরবী ভাষা ও ব্যকরণ তথা নাহু,ছরফ,ইশতিক্বাক্ব,এবং অলঙ্কার শাস্ত্রে রাখতে হবে গভীর পাণ্ডিত্য।
সূত্রঃ ঢাকা টাইমস
লেখকঃ রাসেল মাহমুদ
0 Comments