আমরা এই নিবন্ধে যে বিষয়গুলো জানবো তা হলো- গেরুয়া পতাকা কি? এটি কোন সংগঠনের দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি কাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে? এদের উদ্দেশ্য কি? এদের কার্যক্রমগুলো কি? এটি কিভাবে আলোচনায় এসেছে? এর বর্তমান অবস্থা, এই পরিস্থিতিতে সরকারের ও আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী?
এবার পরিচয়টা জানা যাক-
গেরুয়া মূলত একধরনের কমলা রং। হিন্দুধর্মে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রং । কেননা ভারতে এই রংটি সমধিক গুরুত্বপূর্ণ যার ফলস্বরুপ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরে তাদের জাতীয় পতাকার তিনটি রংয়ের একটি হিসেবে গেরুয়া নির্বাচিত হয়। পাশাপাশি কট্টর হিন্দুত্বাবাদীদের সংগঠন ইসকনের (ISKCON) প্রতীক বা পতাকা- গেরুয়া পতাকা । প্রথমেই বলতে হয়- ইসকন কিন্তু হিন্দুদের কোন সংগঠন নয়, হিন্দুবেশধারী ইহুদীদের একটি সংগঠন। ইসকনকে ‘প্রকৃত অর্থেই ধর্মবিরোধী ও পেশীশক্তি’ বলেছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘ।
পাশাপাশি আবু রুশদের লেখা—“বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’ বইয়ে লেখা আছে-
“‘ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলতঃ এটা ইহুদীদের একটি সংগঠন বলে জানা গেছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।” (বই- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’ পৃষ্ঠা:১৭১)
ইসকনের কয়েকটি কাজ নিম্নরূপ-
১) বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা এবং সনাতনদের মেরে পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়া। যেমন স্বামীবাগের মন্দিরটি আগে সনাতনদের ছিলো, পরে ইসকনরা কেড়ে আগেরদের ভাগিয়ে দেয়। এছাড়া সিলেটের জগন্নাথপুরে সনাতনদের রথযাত্রায় হামলা চালিয়েছে ইসকন নেতা মিণ্টু ধর।
(খবরের সূত্র-http://goo.gl/XwkLvm,http://goo.gl/7hegYE)
২) বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে সাম্প্রদায়িক হামলা করা। কিছুদিন আগে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবীর নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিলো ইসকন।
৩) বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরী করে, উগ্রহিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানো। যেমন- জাতীয় হিন্দু মহাজোট, জাগো হিন্দু, বেদান্ত, ইত্যাদি। বর্তমান অনলাইন জগতে যে ধর্ম অবমাননা তার ৯০% করে ইসকন সদস্যরা।
৪) বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে
চাকুরীতে প্রচুর হিন্দু প্রবেশের অন্যতম কারণ-ইসকন হিন্দুদের প্রবেশ করানোর জন্য প্রচুর ইনভেস্ট করে।
সবার শেষ কথা হচ্ছে- বাংলাদেশে যদি এখনই ইসকনকে নিষিদ্ধ না করা হয়, তবে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে ।
উপরোক্ত কার্যক্রমগুলো তাদের মুখোশ উন্মোচিত করে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ অক্টোবর (শুক্রবার) সনাতন সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবি আদায়ের চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে ইসকনের নেতৃত্বে একটি দল মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট মোড়ে জিরো পয়েন্টে স্তম্ভ ও আশপাশে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা প্রদর্শনের হীন উদ্দেশ্যে, দেশের অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার মানসে এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্বের প্রতীক স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন পূর্বক অবমাননা করেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেন তারা।
এই ঘটনা একটি স্বাধীন ‘রাষ্ট্রের অখণ্ডতাকে অস্বীকারের শামিল’। ষড়যন্ত্রকারীরা জাতীয় পতাকার ওপর তাদের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে দেশের ভেতর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর করার তথা রাষ্ট্রদ্রোহের কাজে লিপ্ত হয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে শ্রেণী বিদ্বেষের জন্ম হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ফলে বুধবার রাতে (৩০ অক্টোবর) ‘স্বাধীনতার স্তম্ভে’ টাঙানো জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের দুজনকে শনাক্ত করে বুধবার সন্ধ্যায় নগরের সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাগুলো হলো-
- অনতিবিলম্বে এসব ন্যাক্কারজনক, সুপরিকল্পিত, ষড়যন্ত্রমূলক ও ঘৃন্য কাজের সাথে জড়িতদের সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। যদিও ইতিমধ্যে এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
- সংগঠনটিকে পূর্ণ নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা। বিশেষকরে তাদের কাজগুলোকে সর্বদায় গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা।
- সম্ভব হলে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। বা তাদের কাজগুলোকে যথাসম্ভব সীমিত করে নিয়ে আসা।
- আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ভূমিকাও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে- আমাদের সকলের উচিত সবসময় চোখ-কান খোলা রেখে তাদের বিষয়ে তদারকি করা এবং আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি যাতে করে তারা এমন দুঃসাহস আর না দেখাতে পারে।
0 Comments