একটা মজ্জাগত ব্যাপার হল, একটা সমাজ বা রাষ্ট্রে যখন দীর্ঘদিন যাবৎ (হতে পারে ১০ বছর বা ২০ বছর) কোনো মতাদর্শ- সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, কমিউনিজম, ফ্যাসিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইত্যাদি বা কোনো উদ্দেশ্য বিরাজমান থাকে, তা সেই সমাজের বা দেশের মানুষের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, চিন্তাজগতের মধ্যে ব্যাপকহারে প্রভাব ফেলে। আর সেই প্রভাবগুলো হতে পারে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক- নাস্তিকতা, ধর্মবিদ্বেষী (বিশেষ করে ইসলাম)।
পাশাপাশি সেই চিন্তাধারা, আচার-আচারণ, দৃষ্টিভঙ্গি গুলো মানুষের মধ্যে স্থায়ী একটা রুপ নেয়। যা সহজেই এড়ানো যায় না। সেগুলো সে তার বা তারা তাদের অভ্যন্তরে ধারণ করে থাকে। অনেকেই বলতে পারেন এই মতবাদ, দৃষ্টিভঙ্গি, কথাবার্তা গুলো তারা তাদের পরিবার থেকেও আসতে পারে। হ্যা, এটা হতেও পারে, কিন্তু এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, পরিবার শাসিত হয় সমাজ দ্বারা এবং সমাজ শাসিত হয় সরকার দ্বারা, যার প্রভাব সর্বক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
একটা দেশে যখন কোনো স্বৈরশাসন বিরাজমান থাকে, তখন সেই শাসনের রুপ অনেকের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। স্বৈরশাসক এবং তার অনুসারীগণ যে আচার-আচরণ, চিন্তাধারা পোষণ করে বা যেসব শব্দ চয়ন করে, তা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বা কারোর সমর্থন পাওয়ার আশায় (সেটি হতে পারে কোনো দেশীয় বা বিদেশি শক্তি), যাতে করে সে বা তারা সুবিধা ভোগ করতে পারে।
আমরা বিগত সরকারের সময়ে দেখেছি, তারা কিভাবে ইসলামের বিভিন্ন রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠানকে এবং ইসলামি চিন্তাভাবনার মানুষ গুলোকে বা দলগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করতো – তাদেরকে মৌলবাদী, জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য, শিবির, অশুভ শক্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারী, উগ্রবাদী ও দেশ-দ্রোহী বলে সম্মোধন করা হতো।
লক্ষণীয় ব্যাপার হল শুধু মাত্র ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম নিয়ে সেকুলারদের কোন মাথাব্যাথা নাই, স্বাভাবিক ভাবেই অন্য সম্প্রদায় গুলো তাদের নিজস্ব ধর্ম পালন করে যাচ্ছে, কেউই তাদের ধর্মীয় বিঁধি বিঁধান নিয়ে রা করছে না, দোষ শুধু ইসলামের, কিন্তু কেন? এক কথায় বললে বলতে হয় ইসলাম কে সাধারণ মানুষ জানে শান্তির ধর্ম হিসাবে, আসলে, ইসলামে প্রকৃত অর্থ হল আত্মসমর্পণ করা, বশ্যতা স্বীকার করা বিশ্ব পালক মহান আল্লাহ্ তা’আলার নিকট। এখানেই বিপত্তি। আল্লাহ্ তা’লার প্রদত্ত বিঁধি নিষেধকে অবজ্ঞা করার কোন অধিকার কোন জিন ও মানব জাতীর আধিকারে নাই যদিও তার কাছে তা অপছন্দ হয়ে থাকে। সেকুলারদের সমস্যা এখানেই।
সম্প্রতি পতিত সরকার মানুষের বেশিরভাগ অধিকার হরণ করায়, মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠে, সরকার পতনে অবদান রেখেছেন। কিন্তু তাদের মতাদর্শের বা দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ এখনো রয়েছে।
যে বিষয়টির জন্য এই কথাগুলো বলা- সম্প্রতি Transparency International Bangladesh এর প্রধান ও বর্তমান সরকারের ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে’র প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও সংবাদমাধ্যমে ‘পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটি’ বাতিল প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি মন্তব্য করেছেন, যা খুবই দুঃখজনক ও হতাশাব্যাঞ্জক এবং যা আমাদের আশার বাণী শোনাচ্ছে না (বিশেষ করে এই নতুন বাংলাদেশে)।
“তিনি বলেছেন যে, ‘নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী হুমকির কাছে অন্তর্বর্তী সরকার আপস করে উদ্বেগজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বর্তমানে নাকি দেশে মৌলবাদী শক্তি মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে এবং কি তিনি এও বলেছেন এরা নাকি অশুভ শক্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারী। এদের কে প্রতিহত করতে হবে, সরকার যেন এদের কথায় কান না দেয়। সেই সাথে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী মহলের সাথে আপসের পথ দৃঢ়ভাবে পরিহার করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়’।”
– রেফারেন্সঃ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, প্রথম আলো)
মৌলবাদী শব্দটার ব্যাপক অর্থ শিকড় বা মূল থেকে উৎপন্ন, তাই তো হওয়া উচিত মানুষ তার শিকড়কে চেনা, জানা ও প্রতিপালন করা, যে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিইতো ভাল জানেন কোনটা আমাদের জন্য গ্রহণীয়। আমরাতো বয়সে পরিপক্ক হয়েই তবে বুঝতে পারবো, যে আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের জন্য কি জীবন বিঁধান দিয়েছেন, তাকেই আঁকড়ে থাকাকে যদি আপনি মৌলবাদী বলেন, তাহলে আমরা তাই, ডঃ জাকির নায়েক এই ভাবেই বুঝিয়েছেন।
প্রথমত, এটি বলা যায়- বিষয়বস্তুর সাথে টিআইবির চারিত্রিক অমিল। এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য করা সমীচিন নয়।
এছাড়াও তার কথা থেকে যে ঘ্রাণ টি পাওয়া যাচ্ছে, তা অবশ্যই বিগত সরকারের দোসরদের আলাপচারিতা। আমরা তাকে সরাসরি এ বলবো না যে তিনি তাদের দোসর। কিন্তু এটা বলা যায় যে, তার দেশবাসীর কাছে ‘মানবতাবাদী’ হিসেবে পরিচিত মুখোশ খসে পড়ে বেরিয়ে পড়ছে আসল চেহারা। তার কর্মকাণ্ডে ঘটছে ছন্দপতন। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার ক্ষমতার তখতে তাউস উল্টে যাওয়ার পর থেকে এটি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। কি এমন দোষের হত যদি ইসলামে পাণ্ডিত্য আছে এমন কিছু ধর্মপ্রাণ লোককে এই পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে অংশ নিতে পারত। মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়েও একজন বিদগ্ধ ইসলামী পণ্ডিতের স্থান হয় নাই এই আসরে। দুঃখজনক নয় কি?
এই নতুন বাংলাদেশে এসব কথা বলার সময় অবশ্য অবশ্যই আরো সতর্ক হতে হবে এবং এমন কথা আমরা না শুনি পাশাপাশি তার বর্তমান বক্তব্য অনতিবিলম্বে পরিহার করতে হবে।
0 Comments