বাংলাদেশের জন্য একটি ভয়াবহ দুঃসংবাদ


বাংলাদেশের জন্য একটি ভয়াবহ দুঃসংবাদ
______________________________
𖣔(এক)
সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।
______________________________
𖣔(দুই)
এতোদিন বাংলাদেশে মদ পান সীমিত ছিল। নির্দিষ্ট লোক, নির্দিষ্ট স্থানে সীমিত পরিমাণে মদ কেনা-বেচা, মদ পান বা বহন করতে পারতো। যারা মদ পান বা কেনা-বেচা করতো লোকচক্ষুর আড়ালে, চার দেয়ালের ভেতরে বা পুলিশকে ঘুষ দিয়ে করতে হতো।
গতকাল বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন বিধিমালা ২০২২” নামে নতুন আইন করে দেশের মানুষকে মদ খাওয়ার লাইসেন্স দিচ্ছে। নতুন আইনের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছেঃ
– যাদের বয়স ২১ বছরের উর্ধে, তারা মদ খাওয়ার লাইসেন্স নিতে পারবে।
– একটা এলাকায় যদি ১০০ জন মদখোর থাকে তাহলে সেই এলাকায় দোকান খুলে মদের ব্যাবসা করা যাবে।
– জুমুআর দিনে মদ বিক্রি করা যাবে না, বাকি ছয় দিন কেনা-বেচা করতে পারবে।
বিস্তারিত সংবাদ দেখুন –
https://youtu.be/CpTWh5Rda-4

إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ،
আমরা তো আল্লাহর। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।

এই সংবাদ শুনে প্রত্যেক মদখোর, মদের ব্যবসায়ী, নাস্তিক, মুনাফেক, কাফির খুশি হবে, আর প্রত্যেক মুসলমান এই সংবাদ শুনে দুঃখিত এবং চিন্তিত হবে। মদ খাওয়ার লাইসেন্স দেওয়া যেমন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়াবহ একটি বিষয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক এমন সার্বিক দিক বিবেচনায় এটা একটা মানবতা বিরোধী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

মদ হচ্ছে সমস্ত পাপের জননী। মদের লাইসেন্স উন্মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে সমাজ এবং দেশের মানুষের মারাত্মক ক্ষতি করা হলো। এমনিতেই মানুষ নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। তার ওপর যত্র-তত্র মদের দোকান সহজলভ্য করে দেওয়া এবং মানুষকে মদ খাওয়ার অনুমতি দেওয়ার কারণে মানুষ আগের চেয়ে আরও বেশি মদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। এর ফলে মদ খেয়ে মানুষ খুন করা, ধর্ষণ, দাংগা-হাংগামা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, গাড়ি এক্সিডেন্টসহ নানা ধরণের অপরাধ আগের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
______________________________
𖣔(তিন)
মদ পান করা হারাম এবং কবীরা গুনাহ। কোন ব্যক্তি যদি মদ পান করা হালাল বলে মনে করে, তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে সে কাফের হয়ে যাবে।

মহান আল্লাহর বাণী,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ  عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ  لَعَلَّکُمۡ  تُفۡلِحُوۡنَ
“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা এবং ভাগ্য-নির্ধারক তীরসমূহ, এইসব শয়তানের নাপাক (অপবিত্র) কাজ ছাড়া আর কিছুই না। সুতরাং, তোমরা এইগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” সূরা আল-মায়ি’দাহঃ ৯০।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মদ সম্পর্কে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেছেন।
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
وَلَا يَشْرَبُ الْـخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ
“মদ পানকারী যখন মদ পান করে, তখন সে ঈমানদার থাকে না।” সহীহ বুখারীঃ ২৪৭৫, সহীহ মুসলিমঃ ৫৭।
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لاَ تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ
“মদ পান করো না, কারণ সর্বপ্রকার অপকর্ম এবং অশ্লীলতার জন্মদাতা হচ্ছে মদ।”
উৎসঃ ইবন মাজাহঃ ৩৩৭১। শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটি সহীহ বলেছেন। সহীহ আল-জামিঃ ৭৩৩৪, আত-তালীকুর রাগীবঃ ১/১৯৬।
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مُدْمِنُ الْخَمْرِ كَعَابِدِ وَثَنٍ
“মদখোর (পাপের ক্ষেত্রে) একজন মূর্তি পূজারী ব্যক্তির সমতুল্য।”
উৎসঃ ইবন মাজাহঃ ৩৩৭৫। শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটি হাসান বলেছেন। সহীহাহঃ ৬৭৭।
(৪) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ
“মদ পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
উৎসঃ ইবন মাজাহঃ ৩৩৭৬, শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটি সহীহ বলেছেন।আহমাদঃ ২৬৯৩৮, সহীহাহঃ ৬৭৫।
(৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি শরাব পান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে ‘‘রাদগাতুল খাবাল’’ পান করাবেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত।”
উৎসঃ ইবন মাজাহঃ ৩৩৭৭, শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটি সহীহ বলেছেন। তিরমিযীঃ ১৮৬২, নাসায়ীঃ ৫৬৬৪, আহমাদঃ ৬৬০৬, দারেমীঃ ২০৯১।
______________________________
𖣔(চার)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মদের সাথে সংশ্লিষ্ট দশ প্রকার ব্যক্তির ওপর লানত (অভিশম্পাত) করেছেন।
(১) যে ব্যক্তি মদ তৈরী করে,
(২) যে ব্যক্তি মদ তৈরী করার নির্দেশ দেয়,
(৩) যে ব্যক্তি মদ পান করে,
(৪) যে ব্যক্তি মদ বহন করে,
(৫) যার জন্য মদ বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়,
(৬) যে ব্যক্তি অন্যকে মদ পান করায়,
(৭) যে ব্যক্তি মদ বিক্রি করে,
(৮) যে ব্যক্তি মদের উপার্জন ভোগ করে,
(৯) যে ব্যক্তি মদ ক্রয় করে,
(১০) যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়।
সুনানে আত-তিরমিযীঃ ১২৯৫, সুনানে ইবনু মাজাহঃ ৩৩৮১, হাদীষটি হাসান, সহীহ আত-তারগীবঃ ২৩৫৭।
______________________________
𖣔(পাচ)
কোন এলাকায় মদের বহুল প্রচলন ঘটলে তখন পৃথিবীতে স্বভাবতই ভূমিধ্বস হবে, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি ঘটবে এবং আকাশ থেকে আল্লাহ্’র আযাব অবতীর্ণ হবে।
(১) আনাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মাঝে (কিছু লোককে) মাটিতে ধসিয়ে দিয়ে, পাথর বর্ষণ করে এবং (শরীর বা চেহারার) আকার বিকৃত করে দিয়ে (তাদেরকে ধ্বংস করা) হবে। আর এই শাস্তি তখন আসবে, যখন তারা মদ পান করবে, নর্তকী রাখবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে।” ইবনে আবিদ দুনইয়া, সহীহুল জামিঃ ৫৪৬৭।
(২) ইমরান ইবনু হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণস্বরূপ আযাব এ উম্মতের মাঝে ঘনিয়ে আসবে।” জনৈক মুসলিম ব্যক্তি প্রশ্ন করল, “হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এইসব আযাব কখন সংঘটিত হবে?” তিনি বললেন, “যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তৃতি লাভ করবে এবং মদ্যপানের সয়লাব শুরু হবে।” জামি তিরমিযীঃ ২২১
______________________________
𖣔(ছয়)
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মদের ব্যাবসায়ী হচ্ছে বাংলাদেশের সরকার।
চুয়াডাংগার দর্শনায় অবস্থিত “কেরু এন্ড কোম্পানি” বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে বছরে প্রায় ৩৯ লাখ ২০ হাজার বোতল বিদেশী মদ উৎপাদন করা হয়। এছাড়া এখান থেকে বার্ষিক প্রায় ২৬ লাখ লিটার বাংলা মদ তৈরী করা হয়। দেশে ও বিদেশে এই মদ বিক্রি করে বাংলাদেশ সরকার কোটি কোটি টাকা হারাম ভক্ষণ করছে।

যারা দেশের লোকদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তাদের কঠোর শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ بَدَّلُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ کُفۡرًا  وَّ اَحَلُّوۡا  قَوۡمَہُمۡ  دَارَ  الۡبَوَارِ
আপনি কি তাদেরকে লক্ষ্য করেন না, যারা আল্লাহর অনুগ্রহকে কুফুরী দ্বারা পরিবর্তন করে নিয়েছে এবং তারা তাদের জাতির লোকদেরকে নামিয়ে আনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে?
جَہَنَّمَ ۚ یَصۡلَوۡنَہَا ؕ وَ بِئۡسَ الۡقَرَارُ
জাহান্নামে, যার মধ্যে তারা দগ্ধ হবে, আর কত নিকৃষ্ট এ আবাসস্থল! সূরা ইবরাহীমঃ ২৮-২৯।
______________________________
© তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও .


Like it? Share with your friends!

0 Comments