সমকামিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন, অপরকে বাঁচান, নিজে বাঁচুন (পর্ব-০১)

আপনারা সকলেই কমবেশি “সমকামিতা” শব্দের সাথে পরিচিত আছেন এবং কি এটা কি তাও অবশ্য জানা আছে  আজকে আমরা সমকামিতার নেতিবাচক দিক ও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস করছি।

সমকামিতা (Homosexuality) বিষয়টি ধর্মীয়, সামাজিক, ব্যাক্তিগত, রাষ্টীয় এছাড়াও বিশেষ করে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে মানব জাতির জন্য অকল্যাণকর।

আমরা যদি শুরুতে ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান, বিশ্বাস বা গ্রন্থের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে একটা বিষয় প্রস্ফুটিত হবে সেটা হলো যে এটা এক ধরণের অমানবিক, নিকৃষ্ট, হীন, এবং অপরাধমূলক কার্যক্রম।

• পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“আর আমরা লূত আলাইহিস সালামকে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিঃপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করে নি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়”।

                                          [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৮০-৮১]

সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহের কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ই এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিঃপূর্বে কাউকে প্রদান করেন নি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের ওপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।

                                                                                                  (তথ্যসূত্র: সূরা হুদ, আয়াত: ৮২-৮৩)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

• “সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত।”

                                                                                              (সহীহুত-তারগীবী ওয়াত-তারহীবী, হাদীস নং ২৪২০)

• বাইবেলে বার বারই বলা হয়েছে যে,

 সমকামিতা একরকমের পাপ (আদি পুস্তক ১৯:১-১৩; লেবীয় ১৮:২২; রোমীয় ১:২৬-২৭; ১ করিন্থীয় ৬:৯) রোমীয় ১:২৬-২৭ পদ সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া এবং তাঁকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ সমকামিতার শাস্তি দেওয়া হয়েছে। লোকেরা যখন অবিশ্বাসের কারণে পাপ করতেই থাকে, তখন ঈশ্বর “লজ্জাপূর্ণ কামনার হাতে” তাদের ছেড়ে দেন যেন তারা আরও জঘন্য পাপে ডুবে যায় এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে নিস্ফল ও নৈরাশ্যের জীবন অনুভব করতে পারে। ১ করিন্থীয় ৬:৯ পদে বলা হয়েছে যে, যারা সমকামিতায় “দোষী”, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার পাবে না।

 সমকামিতার ক্ষতিসমূহ

হারাম যৌন-সম্পর্কগুলো আখিরাতের শাস্তির পূর্বে দুনিয়াবি শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যায় না। আর সমকামিতা

ড. নাদিয়া আল আওয়াদি সমকামিতা সম্পর্কিত দুটি নিবন্ধে সমকামীদের মধ্যে বিস্তার লাভকারী রোগগুলোর আলোচনায় সাম্প্রতিক গবেষণা ও তথ্যানুসারে সমকামীদের আক্রান্তকারী প্রসিদ্ধ রোগগুলোর উল্লেখ করেছেন—

১. এইডস

আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী এইডসের অধিকাংশ সংক্রমণ ঘটে পায়ুকামী পুরুষদের মধ্যে।

প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, আমেরিকায় সর্বমোট ৭,৫৪,১০৩ জন এইডস রোগীর মধ্যে ৩,৪৮,৬৫৭ জন হলেন পায়ুকামী পুরুষ। সেখানে ১,৮৯,২৪২ জন ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করেন আর ৪৭,৮২০ জন একইসাথে পায়ুকাম ও ইঞ্জেকশনের মাদক গ্রহণ করেন।

এটা শুধু মার্কিন অঞ্চলে নয়, বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী হল্যান্ডে সমকামীরা হলেন এইডস রোগীদের ৬.৬৮% এবং ব্রিটেনে এই হার ৮.৬৫%।

কথিত নিরাপদ যৌন-সম্পর্কের প্রচারক তথাকথিত ‘নিবিড় সচেতনতা কর্মসূচি’ থাকা সত্ত্বেও এ সবকিছুই ঘটছে।

আল্লাহর অবাধ্যতায় নিরাপত্তা থাকে কী করে? আল্লাহ তাআলা বলেন-

أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللهِ

• তারা কি আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে? [সুরা আরাফ, আয়াত : ৯৯]

২. মানসিক রোগ

সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাসমূহ সমকামিতা ও মানসিক রোগের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক থাকার কথা জানিয়েছে।

‘আর্কাইভস অব জেনারেল সাইকিয়াট্টি’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে জানানো হয়েছে যে, গবেষকগণ দেখেছেন, সমকামী পুরুষরা পূর্ণ এক বছরেরও বেশি সময় যাবৎ অন্যদের তুলনায় তিন গুণের অধিক হারে মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন আর সমকামী নারীরা অন্য নারীদের চেয়ে ৪ গুণ হারে মানসিক রোগের শিকার হন।

এইসব পরিসংখ্যানে সমকামীদের এই অভিযোগপূর্ণ দাবি নাকচ হয়ে যায় যে, তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে।

শুধু তাই নয়, বরং ‘আর্কাইভস অব জেনারেল সাইকিয়াট্টি’-এর প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, সমকামী পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যা-চেষ্টার হার সুস্থ- স্বাভাবিক পুরুষদের তুলনায় ৬ গুণ!

৩. পায়ু-ক্যান্সার

সমকামী পুরুষদের মধ্যে মলদ্বারের ক্যান্সার বিশেষভাবে বিস্তার লাভ করে।

একটি সাম্প্রতিক চিকিৎসা-গবেষণায় জানানো হয়েছে যে, সমকামী পুরুষদের ৩৮% পায়ু-ক্যান্সারের ভাইরাসে আক্রান্ত হন, যা HPV বা Human Papilloma Virus নামে পরিচিত। এটা সমকামী যৌনসম্পর্কের মাধ্যমেই সংক্রামিত হয়। এটি একটি দুরারোগ্য ব্যাধি, যা মলদ্বার ও লিঙ্গের ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এই হার স্বাভাবিক যৌন- মিলনকারীদের তুলনায় ৫ গুণ বেশি বলে ধারণা করা হয়।

৪. অন্যান্য সংক্রামিত রোগসমূহ

সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে মলদ্বারে ও মলদ্বারের আশপাশে বিভিন্ন উপসর্গের অভিযোগ নিয়ে যেসব সমকামী আসেন তাদের মধ্যে ৫৫% গনোরিয়ায় আক্রান্ত থাকেন।

তথ্যসূত্র: ”জীবন সাজাও যৌবনে” বইয়ের পেইজ ১২৯-১৩০ ।